নিউজ পয়েন্ট সিলেট
রবিবার, ২৩ মে, ২০২১
নিউজপয়েন্ট সিলেট ডেস্কঃ সিলেটের বিমানবন্দর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মানব পাচারকারী মীমসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৩ জন অপহরণকারীও রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। শনিবার (২২ মে) সকালে বিমানবন্দর থানা পুলিশ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
পুলিশ জানায়, প্রায় ৪ বছর পূর্বে সিলেটের ঘাসিটুলা এলাকা থেকে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভারতের চেন্নাইয়ে নিয়ে যায় পান্না বেগম (৪০) নামের এক প্রতিবেশী। চেন্নাইয়ে নিয়ে ওই কিশোরীকে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি করার জন্য ভারতীয় লোকজনের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। এরপর থেকে একটানা দুই বছর সে ভারতের চেন্নাইয়ে বাধ্য হয়ে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়তে হয় কিশোরীকে। সেখানে থাকাবস্থায় রেবা বেগম ওরফে মীমের (৩০) সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে বছর দুই আগে ভারতের এক লোকের সহায়তায় ভিকটিম চেন্নাই থেকে পালিয়ে কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে আসে। মীমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় সে দেশে এসে তার সঙ্গে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। পরে মীম কিশোরীকে আশ্বস্ত করে তার গ্রামের বাড়িতে তাকে পৌঁছে দেবে।
কিন্তু মানব পাচারকারী মীম (৩০) ভিকটিমকে কৌশলে তার গ্রামের বাড়ি থেকে সিলেটের বাদামবাগিচার একটি বাসায় নিয়ে আসে। ওই বাসায় কিশোরীকে জিম্মি করে তাকে নানারকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে।
একপর্যায়ে ভিকটিম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মীমের বাসা থেকে পালিয়ে হাউজিং এস্টেট এলাকায় চলে আসে। সেখানে সিএনজি অটোরিকশাচালক রুবেলের (২৯) কাছে সহায়তা চাইলে সে তাকে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে অন্য এক সিএনজি অটোচালক মামুন (২৬) এর সহায়তায় ভিকটিম বর্তমান ফরহাদ আহমদের (২৬) বাসায় আশ্রয় গ্রহণ করে। এরপর গত ২০ মে রাত ৮টা ৫০ মিনিটে জোর পূর্বক অপহরণকারীরা ছোরার ভয় দেখিয়ে আশ্রয়দাতা ফরহাদ আহমদকে অপহরণ করে একটি সিএনজি অটোরিকশা করে বাদামবাগিচা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে যায় এবং ফরহাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি জেনে ফরহাদের স্ত্রী ৬ হাজার টাকা আরেক সিএনজি ড্রাইভার আনোয়ারের মাধ্যমে টাকা দেয়ার জন্য গ্রেপ্তারকৃত মিশু আহমদের (৩৩) কাছে পাঠায়। একপর্যায়ে ফরহাদ বাধ্য হয়ে অবশিষ্ট ৪৪ হাজার টাকা পরে দেয়ার কথা জানালে গ্রেপ্তারকৃতরা ফরহাদ আহমদের সব কথা মোবাইল ফোনে ভিডিও করে রেখে তাকে ছেড়ে দেয়।
সিলেট বিমানবন্দর থানার ওসি মাইনুল ইসলাম জাকির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ অভিযান চালিয়ে মানব পাচারকারী দলের সদস্য মীম ও অপহরকারী চক্রের আরও ৩ সদস্যসহ মোট ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় কিশোরী ভিকটিম ও ফরহাদ আহমদ থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে, সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার কাদিরপুর গ্রামের শামীম আহমদের স্ত্রী রেবা বেগম ওরফে সুমি ওরফে মীম (৩০), বিমানবন্দর থানাধীন বাদামবাগিচা এলাকার ১নং রোডের ৬৩নং বাসার সেলিম মিয়ার ছেলে শাহেদ আহমদ (৩৩), সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার থানার মাছিমপুর গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৩)ও খাসদবির এলাকার বন্ধন বি/২৩ নং বাসার মৃত রফিক মিয়ার ছেলে ইমন আহমদ (৩২)।