নিউজ পয়েন্ট সিলেট
শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০
দিরাই (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় দিরাই পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মোশাররফ মিয়া দিরাই পৌরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ৫টি বছর দিরাই পৌরসভার মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেছি। দিরাই বাজারের অলিগলিতে আমার সর্বক্ষণ বিচরণ। আমি একজন মানুষ। আমার আচরণ, কথাবার্তা, চলাফেরা, আলোচনা, পঞ্চায়েত-সমাধান, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ভুলত্রুটি হতে পারে। আমার জানা-অজানা ভুলের জন্য আমি আপনাদের কাছে মাফ চাইছি। আমি বিশ্বাস করি, যদি পৌরবাসীর কল্যাণে আমি কাজ করে থাকি, আপনারা ২৮ তারিখ আমার জগ প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে আবারও আপনাদের সেবক হিসেবে গ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। কৌশল করে নৌকা কেড়ে নেয়া হয়েছে। একটি মামলায় আমি, আমার দুই ছেলেসহ বেশ কয়েকজনকে ফাঁসানো হয়েছে। তদন্ত করে ওই মামলা থেকে ইতোমধ্যে সিআইডি, পিআইবি আমরা ৬ জনকে অব্যাহতি দিয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি কুচক্রি মহল ওই মামলাকে ফের পুনরুজ্জীবিত করেছে। মামালার দোহাই দিয়ে আমার নৌকা প্রতীক কেড়ে নেয়া হয়েছে।
প্রতিপক্ষ শিবিরের দিকে ইঙ্গিত করে মোশাররফ মিয়া বলেন, ষড়যন্ত্র করে নৌকা নিয়েছেন, কিন্তু আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসা কমাতে পারবেন না।
দৈনিক জৈন্তা বার্তায় প্রকাশিত একটি সংবাদের উদ্বৃতি দিয়ে মোশাররফ মিয়া বলেন, বহিস্কার বহিস্কার বলে অপপ্রচার করছেন, পত্রিকার পাতা খুলে চোখ মেলে দেখেন। আমি মোশাররফ আমার নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছি। ৩৫ বছর ধরে আওয়ামীলীগ করছি, ভবিষ্যতেও আওয়ামীলীগই করবো। আমি ভেসে আসিনি, পেশীশক্তি দেখাবেন না। মৃত্যুর ভয়ে আমি ভীত নই। আমার জন্মই হয়েছে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার জন্য । যতোদিন বাঁচবো ইনশাআল্লাহ মানুষের পক্ষে কথা বলবো।
শুক্রবার রাত ৯ টায় দিরাই পৌর শহরের পুর্ব বাজার মুক্তিযোদ্ধা পয়েন্টে আয়োজিত মোশাররফ মিয়ার জগ প্রতীকের সমর্থনে বাজারের ব্যবসায়ীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত জণাকীর্ণ পথসভায় বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, কুচক্রিরা বলে বেড়ায় আমি উন্নয়ন করিনি। বিচারের ভার আপনাদের কাছে দিলাম। সভাস্থল মুক্তিযোদ্ধা পয়েন্ট নিয়ে মোশাররফ মিয়া বলেন, এখানে আমার প্রতিপক্ষরা গতকাল মিটিং করে গেল। এই স্থানটি নর্দমার গর্ত, বিদ্যুতের খুঁটি ছিল। আমি জেলা প্রশাসক সাহেবের সাথে কথা বলে খুঁটি সরিয়ে মাটি ভরাট করে পাকা করে দিয়েছি। শতশত যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা এটিকে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। উপজেলার পুর্বাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ দিরাই শহরে আসা-যাওয়ায় এই নৌকা ঘাট ব্যবহার করে। তাদের দূর্ভোগ লাঘব হয়েছে। আয়লাবাজ পয়েন্ট সহ পৌর শহরে মোট ৫ টি স্ট্যান্ড করেছি। থানা পয়েন্ট থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রধান সড়টিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিভাইডার রাস্থা করেছি। ধল রোড থেকে রাধারনগর পর্যন্ত কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন বাইপাস সড়ক করেছি। আখড়া পয়েন্ট থেকে রাধানগর, বাজার ব্রীজ থেকে ঘাগটিয়া প্রশস্থ সড়ক নির্মাণ করেছি। পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে অসংখ্য ড্রেন, পাকা সড়ক করেছি। মানুষকে জিজ্ঞেস করুন, আমার আগে পৌরসভার ১৫ বছরে এসব গ্রামের মানুষ কাঁদাপানি দিয়ে চলাফেরা করতে হতো। মাছ ও সুটকির পৃথক বাজার করেছি। পুরোনো মাছ বাজার স্থানান্তর করে সেখানে সবজি ও কলা ব্যবসায়ীদের জায়গা করেছি। বাজারে মহল্লায় সৌর বিদ্যুৎ দিয়েছি। দৃষ্টিনন্দন পৌর ভবন করেছি। এগুলো সরকারের উন্নয়ন, আমি শুধু দায়িত্ব পালন করেছি। আমি বা আমার পরিষদের কেউ দুর্নীতি করিনি। কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না, বিচার-পঞ্চায়েত বা কোনভাবে কারো কাছ থেকে আমি কখনো দুইটি টাকা নিয়েছি। কেউ একজন বলছেন, আমাকে নাকি দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, মেয়র বানাইছেন। এই চেয়ার কারো বাপের নয়, এটা জনগণের চেয়ার, সরকারের চেয়ার। জনগণ মেয়র বানায়। কেউ বানাতে কিংবা দায়িত্ব দিতে পারে না। তিনি বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে আজ একাট্টা হয়েছেন, তাদের অনেকেই নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন। বিগত উপনির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে মাঠে ছিলেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা করলে সমস্য নাই, আমি করলেই দোষ। আমি জনগণের চাপে প্রার্থী হয়েছি। ইনশাআল্লাহ ২৮ তারিখ দিরাই পৌরসভার মানুষ ভোটের মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে শতভাগ সুষ্ঠু ভোট হবে বলেও জানান মেয়র মোশাররফ মিয়া।
দিরাই বাজার মহাজন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ধনীর রঞ্জন রায়ের সভাপতিত্বে ও সোহেল মিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাবেক জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা জাসদ সভাপতি মোজাম্মেল হক, আওয়ামীলীগ নেতা আরিফুজ্জামান চৌধুরী এহিয়া, ইসকন সদস্য হরিচরণ নিতাই দাস, পৌর কাউন্সিলর সোয়েল চৌধুরী, যুবলীগ নেতা রুবেল সরদার, ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মিয়া, শহীদুল ইলাম, আজিম উদ্দিন, যুবলীগ নেতা রায়হান মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা পয়েন্ট ইজিবাইক চালক সমিতি সভাপতি সাপ্তাব মিয়া, মোটর সাইকেল চালক সমিতির সভাপতি জাভেদ মিয়া প্রমুখ।