
নিউজ পয়েন্ট সিলেট
মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০
সুজিত দাশ: আজ পহেলা অগ্রহায়ণ, নবান্ন উৎসব ও জাতীয় কৃষি দিবস। আজকের দিনেই কৃষকের ঘরে আসতো নতুন সোনালী আমন ধান। আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতো ঢেঁকিঘর। ধান বাড়িতে আনা মাত্রই নতুন ধানের চালে তৈরি হতো নতুন ভাত, পিঠাপুলিসহ নানান মুখরোচক খাবার। দোয়া, শিরনী বা পূজার্চনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হতো এই দিনটিকে। কালের বিবর্তনে পালটে গেছে চিরচেনা সেই চিত্র। নতুন প্রজন্মের কাছে নবান্ন একটি শব্দ মাত্র।
বাঙ্গালির ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নবান্ন উৎসব। একসময় বছরের প্রথম দিন হিসেবে প্রচলন ছিল নবান্নের। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাথে মিশে ছিল দিনটি। ঘরে থেকেই নাকে ভেসে আসতো নতুন ধানের ঘ্রাণ। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জানান দিতো নবান্ন এসে গেছে।
সাধারণত কার্তিকের শেষের দিক থেকেই শুরু হয়ে যেতো ধান কাটা। কৃষকরা প্রস্তুত হয়ে যেতেন ধান কাটা, মাড়াই দেওয়া ও প্রক্রিয়াজাত করার জন্য। আর গৃহিণীরা ব্যস্ত হয়ে যেতেন ঢেঁকিঘর নিকানো ও ফসল রাখার ঘর পরিষ্কার করার কাজে।
বাস্তব জীবনে কৃষকদের জন্য নবান্ন নিয়ে আসতো এক ঝলক হাসি, শুরু হয়ে যেতো ধান কাটা। মাড়াইয়ের পর নতুন ধান শুকিয়ে ঘরে আনার সাথে সাথেই মসজিদ-মন্দিরে সমান তালে চলতো আনন্দ ভাগাভাগি। নিজের সামর্থ্যমতো অনেকেই নিজের ভাগের একটা অংশ দিতে আসতেন উপাসনালয়ে।
অন্যদিকে নতুন ধান থেকে চাল ছাঁটা হত ঢেঁকিতে। তাতে একদিকে দেওয়া হতো বাহারি আলপনা আর অন্যদিকে চলতো পিঠা তৈরির কাজ। নতুন চালে লোভনীয় পিঠা তৈরি হতো ঘরে ঘরে। এছাড়াও মহিলারা চিঁড়ে, মোয়া ও নাড়ু তৈরি করতেন নিজ আনন্দে। রাতে বসত আনন্দের হাট বা গানের আসর। চাষীরাও মনের আনন্দে গাইতেন ‘হেমন্তে কাটা হবে ধান/ শূণ্য গোলায় ফসলের বান।’
শতবর্ষী গোবিন্দ দাস জানান, ‘আমাদের সিলেটে নবান্ন কখনোই ঝাঁক-ঝমকপূর্ণ ছিলনা। কিন্তু এরপরেও আনন্দের কমতি ছিলনা আমাদের মধ্যে। ছেলেবেলায় আমরা নবান্নের সকাল শুরু করতাম নতুন ধান কেটে আনার পর জমিতে পড়ে থাকা খড়ে আগুনে জ্বালিয়ে। বাড়ি এসে খেতাম চিঁড়ের নাড়ু আর মুড়ির মোয়া। বাড়ির উঠানে বসতো সন্যাসের আসর। সেখানে চোখের জল ফেলতেন হিন্দু মুসলিম সবাই। তাদের মাঝে সাম্প্রদায়িকতা বা প্রতিহিংসা ছিলনা। সেই দিন এখন আর নেই, নবান্ন হারিয়ে গেছে সবার হৃদয় থেকে। আজ আরেক নবান্ন, কিন্তু এখন অনেকেই জানেনা নবান্ন কি। অনেকেই জানেনা বাংলা মাসের তারিখ।’ দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাওয়া এই কিষাণ-কিষাণীদের জন্য আজকের নবান্ন উৎসব অনেকটাই অচেনা।