নিউজ পয়েন্ট সিলেট
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তদন্তে দেখা গেছে, সুলতান’স ডাইনের কাচ্চিতে খাসির মাংসই ছিল। কুকুর-বিড়ালের মাংস ছিল না।
১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রভুক্ত দুই ব্যক্তি হলেন কনক লায়লা ও আবদুল হাকিম। তারা বেসরকারি যমুনা ব্যাংকের খণ্ডকালীন কর্মকর্তা ছিলেন।
কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসের পরিবর্তে কুকুর-বিড়ালের মাংস দেওয়ার মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগে গত ৩ এপ্রিল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশি মামলা করেন সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক কামাল আহমেদ। পরে আদালত এ অভিযোগ তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দিল পিবিআই।
পিবিআইয়ের অভিযোগপত্রে বলা হয়, সুলতান’স ডাইন খাসির মাংসের কাচ্চি বিরিয়ানিই সরবরাহ করেছিল। কনক লায়লা ও আবদুল হাকিম ইচ্ছাকৃতভাবে এই প্রচার চালিয়েছিলেন যে কাচ্চিতে খাসির মাংসের বদলে কুকুর-বিড়ালের মাংস খাওয়াচ্ছে সুলতান’স ডাইন।
তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নাজিম উদ্দিন গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসই ছিল। কিন্তু কনক লায়লা ও আবদুল হাকিম সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে কুকুর-বিড়ালের মাংস আছে বলে অপপ্রচার চালান, যা দণ্ডনীয় অপরাধ। মানহানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল কয়েক দফা কনক লায়লা ও আবদুল হাকিমের মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিবারই তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
যমুনা ব্যাংকের গণসংযোগ বিভাগের প্রধান ইমন সারোয়ার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য ফেসবুকে প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে খণ্ডকালীন কর্মকর্তা কনক লায়লা ও আবদুল হাকিমকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক কামাল আহমেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ব্যবসা করে আসছি। আমাদের ঢাকা শহরে নয়টি শাখা আছে। চট্টগ্রামে আছে আরও দুটি শাখা। অথচ আমাদের কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে কনক লায়লা ও আবদুল হাকিম মিথ্যা তথ্য প্রচার করেন। এতে সুলতান’স ডাইনের ব্যবসায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’
অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ২ মার্চ সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখায় সাতটি হাফ (অর্ধেক) কাচ্চি বিরিয়ানি কেনার আদেশ দেন যমুনা ব্যাংকের বনানী শাখার তৎকালীন কর্মকর্তা কনক লায়লা। সেদিন দুপুরে টাকা পরিশোধ করে তিনি খাবার নিয়ে যান। বেলা আড়াইটার দিকে কনক লায়লা সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখার হটলাইন নম্বরে ফোন দেন তিনি। খাবার নিয়ে সুলতান’স ডাইনের সহকারী মহাব্যবস্থাপকের কাছে অভিযোগ করেন।
পরে সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক কামাল আহমেদ দুই প্যাকেট কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে যমুনা ব্যাংকের বনানী শাখায় যান। তখন কনক লায়লা সুলতান’স ডাইনের কর্মকর্তা কামালের কাছে অভিযোগ করেন, কাচ্চিতে খাসির মাংসের পরিবর্তে বিড়ালের মাংস দেওয়া হয়েছে। তিনি কামালকে হুমকি দিয়ে বলেন, র্যাব ডেকে ধরিয়ে দেবেন। কামালকে যমুনা ব্যাংকের নিচতলায় আটকে রাখা হয়। তখন তাঁর কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন আবদুল হাকিম। একপর্যায়ে সুলতান’স ডাইনের লোকজন গিয়ে কামালকে উদ্ধার করেন।
পিবিআইয়ের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনার তিন দিন পর গত ৫ মার্চ কনক লায়লা ফেসবুকে লিখেন, ৩ মার্চ সুলতান’স ডাইন থেকে সাতটি কাচ্চি আনেন। খাওয়ার সময় মাংসের হাড় দেখে সন্দেহ হয় তার। কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসের পরিবর্তে কুকুর-বিড়ালের মাংস খাওয়াচ্ছে।অভিযোগপত্রে বলা হয়, সুলতান’স ডাইনের কাচ্চিতে খাসির মাংসের পরিবর্তে কুকুর-বিড়ালের মাংসের ব্যবহার নিয়ে কনক লায়লার ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি সবার নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। এ নিয়ে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের বার্তা বিভাগের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে পিবিআই।
পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুলতান’স ডাইনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আশরাফুল আলম জানান, তাদের কাচ্চি বিরিয়ানিতে যে খাসির মাংস দেওয়া হয়, তার ওজন ছয় থেকে নয় কেজি। বেশি ওজনের খাসির মাংস সেদ্ধ হয় কম। তাই সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে, বেশি ওজনের খাসির মাংস কাচ্চিতে দেওয়া যাবে না।রেস্তোরাঁটির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গত মার্চে তদন্ত করেছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এই তদন্তে সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসের বদলে অন্য প্রাণীর মাংস দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পায়নি সরকারি সংস্থাটি। কাচ্চি তে খাসি বাদে অন্য প্রাণীর মাংসের ব্যবহার সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় সুলতান’স ডাইনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় অধিদপ্তর।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের তদন্তে উঠে আসে, সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংস ছিল। কিন্তু সুলতান’স ডাইনের ব্যবসায়িক সুনাম নষ্ট করতে তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছিল। এতে জনমনে চরম বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ নানা তথ্য পেয়ে থাকেন। কিন্তু একটা চক্র এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে অনেক মিথ্যা, আপত্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে বিপদে ফেলে। এ ব্যাপারে নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার।’
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা খন্দকার রুহুল আমিন বলেন, সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসের বদলে কুকুর-বিড়ালের মাংস ছিল বলে যারা ফেসবুকে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছিলেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।