
নিউজ পয়েন্ট সিলেট
রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৩
সিলেটে সিনিয়রগিরিতে বাড়ছে অপসাংবাদিকতা
জাবেদ এমরান : সাংবাদিকদের জাতির বিবেক ও সমাজের দর্পণ বলা হয়। সমাজের অপরাধ, অসংগতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি দেশবাসীর সামনে তোলে ধরা একজন সাংবাদিকের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। নীতি-আদর্শে থেকে সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ও অপসাংবাদিকতা রোধ করে। গণমাধ্যমের এথিক্স বা নৈতিকতার বিপরীতে চলছেন সিলেটের মূলধারা বা পেশাজীবী সাংবাদিক দাবিদার অধিকাংশ সংবাদকর্মী। সমাজকে বদলে দেয়ার যে সৎ সাংবাদিকতা সেখান থেকে সরে গিয়ে অস্বচ্ছ নীতিতে ঝুঁকে পড়ছেন অনেক সিনিয়র সংবাদিক। তারা দেশকে এগিয়ে নেয়ার চেয়ে পেছনে ঠেলে দেয়ার নোংরা প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। সত্য, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের চেয়ে তেল মারার সংবাদ-ই এখন বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। যেখানে অসংগতি, অনিয়ম, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি হচ্ছে তা তোলে না ধরে অন্যায়কারীদের সাথে আতাত করছেন নিজেদের স্বার্থে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে দুর্নীতির ঘ্রাণ পেলে তারা নিজেরাই আশক্ত হয়ে পড়ছেন। যেমনটি ঘটে ছিলো সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনায়। দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া সেই সব চেনতার ফেরিওয়ালা সাংবাদিকদের ছবিসহ চাকরীর ঘুষ বাণিজ্যের খবর একাধিক পত্রিকায় প্রকাশ পায়। বিষয়টি জানাজানি হলে কারো চাকরিও চলে যায়। এমন ঘটনায় সিলেটের সাংবাদিক সমাজের মানসম্মান ক্ষুণ্ণ হলেও তাদের লজ্জা শরমে নূন্যতম পরিবর্তন ঘটেনি। সাংবাদিকতার ইতিহাসে সিলেটে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার নজির নেই। অতীতকাল থেকে সাংবাদিকতা পেশা সম্মানজনক অবস্থানে থাকলেও এযাবতকালে এসে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে মুখ থুবড়ে পরেছে অতি লোভী একদল সাংবাদিকের কারনে। তারা নেতাগিরি দেখাতে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহের স্থলে জড়িয়ে পরেন হাতাহাতি কখনো মারামারিতে। কেউ আবার দালালি করতে গিয়ে মার খাচ্ছে জনসাধারণের। ষাটের দশকের সাংবাদিক, সিলেট বালাগঞ্জের উসমানপুরের সন্তান, সিলেট প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সাংবাদিক ও কলামিস্ট বোরহান উদ্দিন খাঁন, অধ্যক্ষ সাংবাদিক মহিউদ্দিন শিরু, সাংবাদিক আব্দুল ওয়াহেদ খাঁন। সৎ ও সাহসী কলম সৈনিকদের মধ্যে আরো আছেন- সাংবাদিক হারুনুজ্জামান চৌধুরী, নির্ভিক সাংবাদিক আব্দুল মালিক চৌধুরী, লেখক-সম্পাদক মুক্তাবিস-উন-নুর, সাংবাদিক-প্রাবন্ধিক আব্দুল হামিদ মানিক, গবেষক-সম্পাদক ফয়জুর রহমান সিলেটের সাংবাদিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র। সাংবাদিক সমাজে বিভেদ সৃষ্টি হয় এমন কোনো কাজ করার নজির নেই তাদের। আব্দুল ওয়াহেদ খাঁনের বাসায় সিলেটের সাংবাদিকতা নিয়ে একবার কথা হলে তিনি বলেন, “সত্তোর-আশির দশকে তারা তরুণদের সাংবাদিকতায় আসতে উদ্বুদ্ধ করতেন, সাহস দিতেন। সম্মানের পেশা সম্মানজনক অবস্থানে যেনো থাকে সেটা চাইতেন”। বহিরাগতরা সাংবাদিকতার মাঠ দখলে নিয়ে সিলেটের অতীতের সুনাম ক্ষুণ্ণ করে চলেছেন। সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতাতে গলা টিপে হত্যা করে যখন যে সরকার ক্ষমতা এসেছে সেই সরকারের বন্দনা করছেন। ক্ষমতাশালী নেতাদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে তাদের পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে গোপনে অবৈধ সম্পদ গড়ছেন। এক সময় এরা ময়লা কাপড় পড়ে সিলেট শহরে এসে নিম্নমানের বাসায় রিফিউজির মতো বসবাস করতেন। আর এখন সর্বক্ষণ নতুন জামা পড়ে নিজস্ব গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ান। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন দামি বাসায়, অভিজাত এলাকায়। দুই চারটা ছাড়া কোন গণমাধ্যম বেতন দেয়? আর যে অংকের বেতন দেয় তা দিয়ে ঠিকমত বাসা ভাড়া মেটানো দুষ্কর হয়। উল্টো টাকা দিয়ে টিভিসহ অধিকাংশ গণমাধ্যমের আইডি কার্ড কিনে বড় সাংবাদিক হয়েছেন। এমন কোন আলাদীনের চেরাগ পেয়ে সিলেটে এক কাপড়ে আসা সাংবাদিকরা সম্পত্তি বানিয়েছেন তা সবাই বুঝে গেছে। যে কোনো বালামুসিবত মোকাবেলা করতে তারা চেতনার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে তৈরি করেছেন নিজস্ব বলয়। সিলেটে নতুন ডিসি, এসপি এলে দেখা করে তাদের বলয় ছাড়া অন্য সংবাদকর্মীদের হলুদ সাংবাদিক বলে আখ্যায়িত করেন। সাংবাদিকদের জন্য কোনো অনুদান এলে লবিং করে তারা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এমন অনেক ন্যাক্কারজনক ঘটনার কারনে সিলেট শহরে সাংবাদিকদের নানা গ্রুপ বা সংগঠনের জন্ম হয়েছে। চড়ুই পাখির মতো বরাই করে চলা পেশাদার নামধারী সাংবাদিক ঠিকাদাররা শহরটাকে মনে করেন নিজের বাপ দাদার পৈত্তিক সম্পত্তি। কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে-ই সামনের চেয়ার নিজের দখলে নেন। চেয়ার না পেলে ব্রু কপালে তোলেন। নিজেদের বলয় ছাড়া অন্য সংবাদকর্মীদের দেখলে হাইব্রিড এসব সাংবাদিকদের এলার্জি বেড়ে যায়। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও বাকস্বাধীনতাকে পিষে মারার ষড়যন্ত্রকারীদের ঠেলাঠেলিতে সিলেটে বাড়ছে অপসাংবাদিকতা।