
নিউজ পয়েন্ট সিলেট
মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ, ২০২১
গত বছরের মার্চে শুরু হওয়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস দেশে ফের তাণ্ডব চালানো শুরু করেছে। মিউটেশন ঘটিয়ে আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করায় বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। নতুন আক্রান্তের তালিকায় বেশি যুক্ত হচ্ছে তরুণদের নাম।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ইতোমধ্যে ১৮টি নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। নির্দেশনায় অধিক জনসমাগম রোধ করা, গণপরিবহনে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী তোলা করা, বিয়ে, বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সমাগম নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। তবে বড় ধরণের পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনো বিধি নিষেধ জারি করা হয়নি। এই অবস্থায় সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ২৬ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়। ওইদিন নতুন করে ৩ হাজার ৭৩৭ জন সংক্রমিত হন। এর পরের দিন অর্থাৎ ২৭ মার্চ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ জনে। এদিন আক্রান্ত হন ৩ হাজার ৬৭৪ জন। ২৮ মার্চ মৃত্যু হয় ৩৯ জনের। এদিন নতুন করে আক্রান্ত ৩ হাজার ৬৭৪ জন। ২৯ মার্চ দেশে একদিনে আক্রান্তের নতুন রেকর্ড হয়। এদিন ৫ হাজার ১৮১ জন আক্রান্ত হন। মারা যান ৪৫ জন। আর আজ ৩০ মার্চ ৫ হাজার ৪২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে সংক্রমণ এবং মৃত্যু দুটোই বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে যেভাবে রোগী শনাক্ত হচ্ছে ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে আগামী কয়েকদিনে সেটি আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন। বলেন, এই মুহূর্তে যেভাবে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে আমাদের ধারণা আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মাথায় মৃতের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে। করোনা প্রতিরোধে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। তবে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার পর মৃত্যু কমে আসবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন করে তরুণরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। গত কয়েকদিনের তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর তরুণরাই বাড়ির বাইরে বেশি বের হয়েছেন। সেজন্য এখন তারাই বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন। আগে ঘর থেকে মানুষ কম বের হতো, এখন বের হচ্ছেন, চাকরিতে যাচ্ছে, বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে সেজন্য সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে দেশের ২৯টি জেলাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার। এগুলো হলো, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফেনী, চাঁদপুর, নীলফামারী, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজশাহী ও নওগাঁ।
প্রসঙ্গত, দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) দুপুর ২টা পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৯৯৪ জনে। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৭ জন।