কানওয়ালের আত্মবিশ্বাসের কাছে হার মেনেছে শরীরী ‘প্রতিবন্ধকতা’। প্রতিযোগিতার শেষে তাকেই সেরা সুন্দরীর মুকুট পরিয়ে দেন বিচারকরা। ২০২১-এর ‘মিস ফ্লোরিডা ইউএস কন্টিনেন্টাল’-এর খেতাব জিতে নিয়েছিলেন তিনি। কানওয়ালের জন্ম ভারতের দিল্লিতে। সেখানেই বড় হওয়া। ১৯৯৯ সালে তিনি দেশ ছেড়ে ফ্লোরিডায় চলে গিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু দিল্লিতে এখনও তার পরিবার রয়েছে।
কানওয়াল নিজে একজন চিকিৎসক। ফ্লোরিডার বাওয়া মেডিক্যাল-এর মালিকও। ২০২০ সালে তার ক্যানসার ধরা পড়ে। তত দিনে ক্যান্সারের জীবাণু অনেকটাই ছড়িয়ে পড়েছিল শরীরে। ওষুধে যে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়, চিকিৎসকেরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন তাকে। নিজে চিকিৎসক হওয়ায় বুঝতেও পেরেছিলেন। একাধিক পরীক্ষার পর ২০২০-র নভেম্বর মাসে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ক্যানসার সংক্রমণ রুখতে অস্ত্রোপচারের ফলে বাদ যায় তার একটি স্তন। যমজ সন্তানের একা মায়ের পক্ষে এই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত খুবই কঠিন ছিল।
অস্ত্রোপচারের পরের দিনগুলি ছিল আরও ভয়ঙ্কর। কেমোথেরাপি শুরু হল তার। একটার পর একটা কড়া ইঞ্জেকশন শরীরে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। শরীরে তার ছাপ পড়েছে একটু একটু করে। চুল অনেক পাতলা হয়ে গিয়েছে। হাত-পায়ের নখগুলিও যেন কেমন কালো হয়ে গিয়েছিল। গায়ের চামড়া জেল্লা হারিয়ে ক্রমে রুক্ষ হয়ে উঠেছিল। শরীরে নানা ধরনের দাগও ফুটে উঠছিল। সেই দাগে ভরে গিয়েছিল মুখও। নিজের সঙ্গেই যুদ্ধ করছিলেন কানওয়াল। মানসিক যুদ্ধ। ক্যানসারের মতো রোগ তো মানসিকভাবেই আগে মেরে ফেলে। তার থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেন।
ক্যানসারের কাছে হার মানেননি কানওয়াল। অস্ত্রোপচারের কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি মিস ফ্লোরিডার প্রতিযোগিতার মঞ্চে হাঁটেন। শরীরের সমস্ত ‘প্রতিবন্ধকতা’ লুকিয়ে নয়, বরং সেগুলি যে অস্বাভাবিক কিছু নয় তা জানাতেই খোলামেলা পোশাকে র্যাম্পে হাঁটেন তিনি। শুধু নিজের জন্য নয়, কানওয়াল তার মতো সমস্ত ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্যই র্যাম্পে হেঁটেছিলেন। তাঁদের সকলের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাই করেছিলেন তিনি। এখানেই থেমে থাকতে চান না তিনি, তাই তো এবার তার লক্ষ্য মিস আমেরিকা।