
নিউজ পয়েন্ট সিলেট
মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১
সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় তার আলিশান বাড়ি। স্ত্রী-সন্তান থাকেন লন্ডনে। রয়েছে দামি গাড়িও। মো. সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদ সবই গড়ে তুলেছেন প্রায় দুই যুগের চোরাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। সাঈদ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪টি মামলার আসামি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ছয়টি মামলায় তিনি দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন।
প্রতিবার জামিনে বেরিয়ে তিনি আবার চুরিতে জড়িয়েছেন। শতাধিক সদস্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ২৩ বছরে পাঁচ হাজারের বেশি কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক থেকে চুরি করেছেন। সিলেটি সাঈদ চক্রের সাতজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ডিবির পক্ষ থেকে এই সিন্ডিকেটকে গ্রেফতারের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লথিং লিমিটেড নামের গার্মেন্টসের ১৭ হাজার ১৫২টি তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়া হয়। মালামাল শিপমেন্টের সময় গণনাকালে পাঁচ হাজার মাল কম পাওয়া যায়।
আরও বলা হয়, এ ঘটনায় মামলার তদন্তে গার্মেন্টস পণ্য চোরচক্রের মূল হোতা সিলেটি সাঈদসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা তেজগাঁও টিম। গত রোববার রাজধানীর উত্তরা ও কুমিল্লা জেলার বুড়িচং এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অন্য ব্যক্তিরা হলেন রাজ্জাক, ইউসুফ, মাইনুল, আলামিন, দুলাল হোসেন ও খায়রুল। তাঁদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৭০৫টি তৈরি পোশাকসহ দুটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়।
এসব ঘটনায় গার্মেন্টস শিল্পের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে আরও বলা হয়, গত ১১ মে জয়ন্তী নিটওয়্যার লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার ৮২০টি পণ্য রপ্তানির করতে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠায়। বিদেশে মালামাল পৌঁছার পর জানা যায়, শিপমেন্টে ১১ হাজার পণ্য কম ছিল। এ জন্য বিদেশি বায়ার প্রতিষ্ঠানটিকে ২৮ হাজার ৯০৮ ডলার জরিমানা করে। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।
চোরাই গার্মেন্টস পণ্যের কেনাবেচার ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, দেশের ছোট ছোট কিছু বায়িং হাউসে যাচ্ছে এসব চোরাই গার্মেন্টস পণ্য। আর ওই সব পণ্য ছোট বায়িং হাউসগুলো বিদেশি ছোট ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন মার্কেটেও যাচ্ছে এসব চোরাই গার্মেন্টস পণ্য।
সিলেটি সাঈদ গার্মেন্টস পণ্য চোরাই চক্র কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার আরও বলেন, সর্বশেষ তিনি একটি মামলায় আট মাস কারাগারে ছিলেন। তবে বেরিয়েই আবার জড়িয়ে পড়েন গার্মেন্টস পণ্য চোরাই কারবারে। পণ্য চুরি তাঁর পেশা ও নেশা। এ জন্য চালকদের নিয়ে তিনি বিশাল একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।
ডিবির তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহাদাত হোসেন সোমা বলেন, সিলেটি সাঈদের কাভার্ড ভ্যানের ব্যবসা ছিল। কাভার্ড ভ্যানের মালামালই তিনি চুরি করতেন। তবে চুরির ঘটনা ধরা পড়ার পর ১৯৯৮ সালে তাঁর সাতটি কাভার্ড ভ্যান তিনি বিক্রি করে দেন। চালকদের মাধ্যমে শতাধিক সদস্যের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।
শাহাদাত হোসেন সোমা আরও বলেন, সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি প্রায় পাঁচ হাজার কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক ব্যবহার করে ২৫ হাজার চুরি করেছেন। সে টাকায় সিলেট ও মৌলভীবাজারে দুটি আলিশান বাড়ি করেছেন। এ ছাড়া তাঁর শতকোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। দুই স্ত্রীর মধ্যে একজন সন্তানসহ লন্ডনে থাকেন। অপর স্ত্রী দেশেই থাকেন।