1. [email protected] : Joyanta Goswami : Joyanta Goswami
  2. [email protected] : Developer :
  3. [email protected] : News Point : News Point
শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:২৫ অপরাহ্ন

নিউজ পয়েন্ট সিলেট

বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২১

বাঙালির পৌষ পার্বণ ও সংক্রান্তি আজ


নিউজ পয়েন্ট ডেস্কঃ বাংলা পঞ্জিকার হিসেবে পৌষের শেষ দিন মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তির দিন। সনাতনী বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ পৌষ সংক্রান্তি।

পৌষ সংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পঞ্জিকা বর্ষ অনুযায়ী পৌষ মাসের শেষ দিনে পৌষ সংক্রান্তি পালিত হয়। আর পৌষ-পার্বণ মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা উৎসবের ধুম।

বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে পালিত হচ্ছে পৌষ সংক্রান্তি।প্রাচীনকাল থেকেই এ দিনটিতে গ্রামাঞ্চলে বসে মেলা, ঘরে ঘরে চলে নতুন চালের পিঠা-পায়েসের আয়োজন। পৌষ সংক্রান্তি ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করলেও ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ ধারণায় বেড়ে ওঠা বাঙালি জাতির কাছে আজ এটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। মকর সংক্রান্তি নতুন ফসলের উৎসব ছাড়াও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে ‘উত্তরায়ণের সূচনা’ হিসেবে পরিচিত। একে অশুভ সময়ের শেষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় নানা রকম খাবার। সংক্রান্তির দিনে বাংলার প্রতিটি ঘরেই গৃহিণীরা নতুন চালের বিভিন্ন নকশা ও সুস্বাদু পিঠে তৈরি করেন।তবে বর্তমানে ব্যস্ত জীবনে পিঠে তৈরির সময় বার করা অনেকের কাছেই কঠিন হয়ে পড়েছে । তাই পিঠের স্বাদ নেওয়ার জন্য শরণাপন্ন হতে হয় নামী রেস্তোরাঁ বা মিষ্টির দোকানের।কিন্তু এই পিৎজা বার্গারের যুগেও পিঠে পুলি আছে সেই পিঠে পুলিতেই। মায়ের হাতের তৈরি পিঠে পুলি আজও আদি ও অকৃত্রিম, কারণ তাতে মেশানো থাকে আদর, স্নেহ, ভালোবাসার স্পর্শ।এদিকে বর্তমানে এ উৎসবে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।

এদিন সন্ধ্যার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়ে যায় আতশবাজি ও ফানুস উড়ানো। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব এলাকায় চলে আতশবাজির খেলা। সংক্রান্তিতে কোথাও কোথাও আবার শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেওয়া এবং পিঠার ডালা পাঠানো একটি রেওয়াজ। শ্বশুরবাড়ি থেকে ডালা হিসেবে আসা ঘুড়ি, পিঠা আর অন্যান্য খাবার বিলি করা হয় আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়ার লোকদের মধ্যে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে কথিত আছে, প্রায় ৫০০০ বৎসর পুর্বে দ্বাপর যুগে হস্তিনাপুর রাজ্য নিয়ে এবং অধর্মের বিনাশ ও ধর্ম প্রতিষ্টার লক্ষে কৌরব ও পান্ডব পক্ষের মধ্যে ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে এক মহাযুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে কৌরব পক্ষের প্রধান সেনাপতি ছিলেন ব্রহ্মচারী চিরকুমার মহাবীর পিতামহ ভীষ্মদেব। পান্ডব পক্ষে প্রধান সেনাপতি ছিলেন মহাবীর অর্জুন। দশম দিনের যুদ্ধে পিতামহ ভীষ্মদেব মহাবীর অর্জুনের শরাঘাতে শরশয্যায় পতিত হন। পিতামহ ভীষ্মদেব ইচ্ছামৃত্যুর বর প্রাপ্ত ছিলেন। তিনি জ্ঞাত ছিলেন মৃত্যুর পর দেবলোকে গমন করবেন। যেহেতু মাঘ মাস হইতে আষাঢ় মাস পর্যন্ত ছয় মাস উত্তরায়ণ অর্থাৎ দেবলোকে দিন এবং শ্রাবণ মাস হইতে পৌষ মাস পর্যন্ত ছয় মাস দক্ষিনায়ণ অর্থাৎ দেবলোকে রাত্রি। দক্ষিনায়ণে দেবলোকের দ্বার বন্ধ থাকার কারণে প্রবেশ করা যায় না। তাই পিতামহ ভীষ্মদেব ভাবলেন এই মুহুর্থে দেহত্যাগ করলে দেবলোকে প্রবেশ করা যাবে না। অন্ধকারে দেবলোকের দ্বারপ্রান্তে একাকি বসে থাকতে হবে। পক্ষান্তরে ইহলোকে অবস্থান করলে অনেক আত্মীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হবে। ধর্ম নিয়ে আলাপ আলোচনা করা যাবে, ভাগ্যক্রমে হয়তো বা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পাওয়া যাইতে পারে। তাই পিতামহ ভীষ্মদেব দেহত্যাগের উদ্দ্যেশে শুভ উত্তরায়ণ সংক্রান্তির অপেক্ষা করিতে থাকেন। পিতামহ ভীষ্মদেব শরশয্যায় থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পান। অনেক আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবের সহিত ধর্ম নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন। আর্য সম্প্রদায়ের উদ্দ্যেশে বলে যান তিনি নিঃসন্তান, তাই আর্য-সম্প্রদায় তাঁহার অন্তেষ্ট্রিক্রিয়া সহ অন্যান্য পরলৌকিক ক্রিয়াকর্ম পালন করতে। তিনি আর্শীব্বদ করে যান এতে জগৎবাসী ও পিতৃপুরুষগনের কল্যান হবে। দীর্ঘ ৫৬ দিন শরশয্যায় অবস্তানের পর অবশেষে উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তির নিশান্তে পিতামহ ভীষ্মদেব যোগবলে দেহত্যাগ করে দেবলোকে গমন করেন। প্রায় ৫০০০ বৎসর পুর্ব হইতে আমরা প্রতিবৎসর উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তিতে প্রাতকালে খড়-কুটা জড় করে পিতামহ ভীষ্মদেবের প্রতীকি শবদাহ করে থাকি। অনেকে এই শবদাহকে মেড়ামেড়ির ঘর বা ভেড়াভেড়ির ঘর জ্বালানো বলে থাকেন এবং এই দিন মাছ মাংশ আহার করে থাকেন, যাহা সম্পুর্ণ অনুচিত। কারণ উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তি অন্তেষ্টিক্রিয়া ও শ্রাদ্ধ সংক্রান্ত অনুষ্টান। অন্যদিকে এই দিবসটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এই দিন প্রাতকালে দেবলোকের সকল দেবতাগন ও স্বর্গবাসী পিতৃপুরুষগন নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন। এই জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীগন ব্রাহ্ম মুহুর্থে স্নান, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, গ্রামে, নগরে সংকীর্ত্তন, গীতাপাঠ, অন্নদান, বস্ত্রদান বা আর্থিক অনুদান দেওয়া সহ মঙ্গলজনক কাজ করে থাকেন এবং প্রতি বৎসর শাস্ত্রসমত ভাবে ভাবগাম্ভীর্যের সহিত এই অনুষ্টান পালন করা হয়ে থাকে।

আপনার মতামত দিন
এই বিভাগের আরও খবর

সিলেটের সর্বশেষ
© All rights reserved 2020 © newspointsylhet