
নিউজ পয়েন্ট সিলেট
বুধবার, ১২ মে, ২০২১
বৈচিত্র্যময় উপাদান নিয়ে মানব সমাজ গঠিত। সমাজে বসবাসরত মানুষদের মধ্যে পৃথক পৃথক সত্ত্বা আজ বিদ্যমান। অভ্যন্তরীণ গুণাগুণ, দোষ-ত্রুটি ছাড়া বাহ্যিকভাবেও রয়েছে অনেক পার্থক্য। মানুষের মধ্যে কেউ লম্বা, কেউ খাটো, কেউ ফর্সা, কেউ কালো আবার অনেকেই আছে এমন যাদের মধ্যে কারো হাত নেই কারো পা নেই, কারও বা দৃষ্টি শক্তি নেই। আবার অনেকে কানে শোনে না কথাও বলতে পারে না। সমাজে এসব মানুষ হলো ব্যতিক্রম। এদেরকে সাধারণভাবে প্রতিবন্ধী বলা হয়। স্বাভাবিক মানুষের বাইরে যেসব মানুষের শারীরিক ও মানসিক ত্রুটির কারণে জীবনের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হয় তাদেরকেও বলা হয় প্রতিবন্ধী। সমাজে প্রতিবন্ধীদের অবস্থান অত্যন্ত অবহেলিত। পরিবার থেকে শুরু করে সব স্থানেই প্রতিবন্ধীদেরকে খাটো করে দেখা হয়। আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সব অধিকার ভোগ করার কথা থাকলেও বরাবরই তারা তা থেকে বঞ্চিত। আত্মীয়-স্বজন সামাজিক মান মর্যাদার ভয়ে তাদের দূরে সরিয়ে রাখেন। সমাজে তাদের অবাধ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষা, চাকরি, কর্মসংস্থান, বিয়ে, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হয়। বিভিন্ন ধরণের বৈষম্যের শিকার হয়ে তারা সমাজে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারে না। তাই আমাদেরকে এ ধরণের মন মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। মানুষের পাশে মানব সেবা ‘মানব সেবার বন্ধুরা’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন গত মঙ্গলবার দুপুর ২টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর এলাকায় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রায় ৯০ জন প্রতিবন্ধীদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রধান সেচ্ছাসেবক হাফিজুর রহমান চৌধুরী তুহিন, শ্রীমঙ্গল সাংবাদিক সমিতির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন জসিম, চায়ের রাজধানীর এ্যাডমিন ও মানব সেবার সদস্য শামসুল হুদা হেলাল, মানব সেবার সদস্য পাভেল আহমদ প্রতিবন্ধীদের সাথে আড্ডায় মুগ্ধ, তাদের কাছে ঈদ আনন্দ। কালাপুর এলাকার প্রতিবন্ধী সোহেল বলে, ‘আজকে আমার অনেক বালা লাগের, আমি সবার সাথে মাত্তে পাররাম, আমার সাথে কেউ বেশি কথা কয় না, আমার সাথে কেউ কথা কইলে আমার কুব বালা লাগে’। বরুণা এলাকার প্রতিবন্ধী মানিক মিয়া বলেন, ‘মানব সেবার বন্ধুরা আমারে অনেক সাইয্য করইন, আমি তারার কাচ তাকি রিন (ঋণ) নিয়া ব্যবসা করছি, আমি বাশঁ দিয়া মছধরার অনেক জিনিস বানাইতে পারি, তুহিন চৌধুরী ভাই আমারে টেকা পইসা দেই, একন আর আগের মতো কিচ্ছু করতাম পারি না, আজকে একসাথে আমার বালা লাগের’। একিই ভাবে গাজিপুরের প্রতিবন্ধী আলেমা বেগম বলেন, ‘আমার যে কেনে এতো বালা লাগের, আমি আজকে যাইতাম নায়, আমারে তোমরার দারও রাকি দেও রে গো’। একে একে এভাবেই প্রতিবন্ধীরা তাদের জমানো মনের আকুতি প্রকাশ করেন। প্রধান সেচ্ছাসেবক তুহিন চৌধুরী সংগঠনের গাড়ী দিয়ে প্রতিবন্ধীদের হাতে দেড় কেজি ওজনের একটি মোরগ, ১০ কেজি চাল, ডাল, তেল, পিয়াজ, সেমাই’সহ ১২০০ টাকা মূল্যের প্যাকেট প্রতিবন্ধীদের বাড়ীতে পৌছেদেন। আমাদের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে এতো বিপুল সংখ্যক প্রতিবন্ধীকে পুনর্বাসন করা অত্যন্ত দূরহ। তাই সমাজের সচেতন সকল স্থরের বিশেষ করে বিত্তবান মানুষদের প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত।