নিউজ পয়েন্ট সিলেট
রবিবার, ২ মে, ২০২১
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলতি পাল্লেকেলে টেস্টে জিততে হলে করতে হবে অসাধ্য সাধন। গড়তে হবে রান তাড়ার বিশ্বরেকর্ড। আপাতদৃষ্টিতে যা বলতে গেলে অসম্ভবই মনে হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য। আলোর স্বল্পতায় চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে যে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৭ রান।
জয়ের জন্য এখনও দরকার ২৬০ রান। হাতে আছে ৫ উইকেট। ১৪ রান নিয়ে ব্যাট করছেন লিটন দাস, ৪ রান নিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ রয়েছেন তার সঙ্গে। সবচেয়ে বড় কথা, স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে এই দুজনই শেষ ভরসা।
তারপর আর বড় ইনিংস খেলার মতো কেউ নেই। আর কারো বড় ইনিংস ছাড়া কিছুতেই এই ম্যাচে হার বাঁচাতে পারবে না টাইগাররা। প্রকৃতির বদান্যতা পেলে বড়জোড় ড্র হতে পারে। সেই সম্ভাবনা তো সব ম্যাচেই থাকে, বাস্তবে ঘটে ক’বার। বাংলাদেশের সামনে তাই এখন কিছুই করার নেই। লিটন দাস আর মেহেদি হাসান মিরাজের মধ্যে কেউ কি পারবেন সেঞ্চুরি ইনিংস খেলে দলকে বাঁচিয়ে দিতে? উত্তরটা শেষ দিনের জন্যই জমা থাক।
তবে বাস্তবতা বলছে নিজেদের প্রথম ইনিংসেই যখন ২৪২ রানে পিছিয়ে থেকেছে বাংলাদেশ, তখনই শঙ্কাটা জেগেছিল, পরাজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। এবার সেই শঙ্কা বাস্তবায়নের পথে রয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
লঙ্কান স্পিনারদের ঘূর্ণি জাদুর মুখে একের পর এক উইকেট হারাচ্ছে বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের সেরা তিন ব্যাটসম্যানের সঙ্গে মিডল অর্ডারের সেরা নির্ভরতা মুমিনুলের পর বিদায় নিলেন মুশফিকুর রহীমও। সুতরাং, পরাজয়টা এখন যেন অবধারিত হয়েই দাঁড়িয়েছে।
জয়ের লক্ষ্য ৪৩৭ রানের, ড্র করতেও খেলতে হবে প্রায় দেড়শ ওভার- শ্রীলঙ্কা সফরের শেষ ম্যাচে এমন কঠিন সমীকরণের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কিন্তু এর জবাবে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি সফরকারিদের। দলীয় সংগ্রহ একশ পার হওয়ার আগেই ফিরে যান টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান। ১৭১ রানের মধ্যে ফিরলেন সেরা ৫ ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে একাই ৬ উইকেট নিয়েছিলেন অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রম। ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন দ্বিতীয় ইনিংসেও। প্রথম ৫ উইকেটের মধ্যে ২টিই গেছে জয়াবিক্রমের ঝুলিতে, তিনটি নিয়েছেন অফস্পিনার রমেশ মেন্ডিস। মূলতঃ মেন্ডিস আর জয়াবিক্রমা মিলেই ধস নামাচ্ছেন বাংলাদেশ ইনিংসে।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৪৯৩ রান করে ইনিংস ছেড়েছিল শ্রীলঙ্কা। জবাবে বাংলাদেশ দল অলআউট হয় ২৫১ রানে। নিয়ম মোতাবেক বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়লেও, তা করাননি লঙ্কান অধিনায়ক। ২৪২ রানের বিশাল লিড নিয়ে নিজেরাই ব্যাটিংয়ে নামেন দ্বিতীয় ইনিংসে।
আজ (রোববার) ম্যাচের চতুর্থ দিন দ্বিতীয় সেশনে ইনিংস ঘোষণার আগে শ্রীলঙ্কা করেছে ৯ উইকেটে ১৯৪ রান। প্রথম ইনিংসের ২৪২ রানসহ তাদের লিড দাঁড়িয়েছে ৪৩৬ রানের। এ রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে হবে বাংলাদেশকে। যা রীতিমতো অসাধ্য এক ব্যাপার।
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২১৫ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। আর সাদা পোশাকের অভিজাত ক্রিকেটে রান তাড়া করে জেতার বিশ্বরেকর্ড ৪১৮ রানের। অর্থাৎ ম্যাচ জিততে এখন ইতিহাসই গড়তে হবে মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহীমদের।
শ্রীলঙ্কার ৯ উইকেট নেয়ার পথে ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো ফাইফার তথা ৫ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। এ নিয়ে বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইফার পেলেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশি ফাইফার রয়েছে শুধুমাত্র সাকিব আল হাসানের (১৮)।
৪৩৭ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চলতি সিরিজে চতুর্থবারের মতো প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি হাঁকান তামিম। রমেশ মেন্ডিসের করা পরের ওভারেই হাঁকান ছক্কা। তার শরীরী ভাষায় স্পষ্ট ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। সুরঙ্গা লাকমলের করা সপ্তম ওভারের প্রথম দুই বলেই হাঁকান জোড়া বাউন্ডারি।
কিন্তু তামিমকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি অফস্পিনার মেন্ডিস। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে দারুণ টার্ন এন্ড বাউন্সে কট বিহাইন্ড হন ২৪ রান করা তামিম। একই ওভারে ফিরতে পারতেন নাজমুল শান্তও। রমেশের হালকা টার্ন করা বল ছেড়ে দেন তিনি, আঘাত হানে প্যাডে। আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি শ্রীলঙ্কার।
পরে সাইফ হাসান ও নাজমুল শান্ত মিলে ওয়ানডে মেজাজে গড়েন ৪২ রানের জুটি। অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হওয়ার মাশুল দিতে হয় সাইফকে। জয়াবিক্রমের করা ইনিংসের ১৭তম ওভারে বড় শট খেলতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে লাকমলের হাতে ধরা পড়েন ৫ চার ও ১ ছয়ের ৩৪ রান করা সাইফ।
এরপর মুমিনুল হকের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলীয় শতরান পার করান নাজমুল শান্ত। তবে সাজঘরে ফিরে যান এর পরপরই। জয়াবিক্রমের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে সরাসরি বোল্ড হয়ে যান শান্ত। তার ব্যাট থেকে আসে ২৬ রানের ইনিংস।
তৃতীয় সেশন শুরু হওয়ার পরপরই ফিরে যান মুমিনুল। ৪৮ বলে ৩২ রান করে অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিসের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। মুমিনুল ফিরে যাওয়ার পরই পরাজয়ের শঙ্কা ঝাঁকিয়ে বসে। এরপর ৬৩ বলে ৪০ রান করা মুশফিকও যখন সেই মেন্ডিসের বলে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান, তখন পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে পড়েছে।