
নিউজ পয়েন্ট সিলেট
বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১
সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম হাসান: দোয়ারাবাজারের চাঞ্চল্যকর নূর আলম হত্যা মামলা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে ফাঁসানোর অভিযোগ আসামীপক্ষের। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার পরিবর্তন চান বাদী
দোয়ারাবাজারের চাঞ্চল্যকর নূর আলম হত্যা মামলায় এক মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া
গেছে। এ বিষয়ে সিলেট রেঞ্ছের ডি.আই.জি বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুস
ছাত্তারের স্ত্রী নূরজাহান বিবি।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের দোয়ারাবাজার থানা পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে মামলার বাদী আব্দুল
মজিদ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আই.ও) পরিবর্তনের জন্য সুনামগঞ্ছের পুলিশ সুপার বরাবরে আবেদন
করেছেন।
জানা গেছে, ৩ জুন দিবাগত রাতে কোন এক সময় অজ্ঞাত আততায়ীদের হাতে খুন হন দোয়াবাজার থানার
ধর্পনগর গ্রামের নুর ইসলামের পুত্র নুর আলম (১৯)। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, দোয়ারাবাজার
উপজেলার পশ্চিম বাংলা বাজারে আব্দুল মজিদের মালিকানাধীন খাবার হোটেলে রাত গত ৩ জুন রাতে খাওয়া
দাওয়ার পর দোকানেই ঘুমিয়েপড়েন আব্দুল মজিদের ভাই নুর আলম। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দোকান খোলা
হয়েছে কি-না জানার জন্য নুর আলমের মোবাইলে ফোন দেন আব্দুল মজিদ। কিšদ, নুর আলমের মোবাইল
ফোন তিনি বন্ধ পান। পরে, তার অপর ভাই রজব আলীর সাথে যোগাযোগ করলে রজব আলী জানায়, নুর
আলম দোকানে নেই। রজব আরো জানান, স্থানীয় জিরাগাঁও গ্রামের গুলফর আলীর ছেলে কামরুল ইসলাম
(২১) আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নুর আলমকে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আব্দুল
মজিদ ও তার ভাই রজব আলী মিলে নুর আলমকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। সকাল ৯টার দিকে স্থানীয়
চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা জনৈক সুফিয়ান আহমদ রজব আলীকে ফোন করে জানায়, নুর আলমের লাশ জিরাগাঁও
গ্রামের জনৈক আলী আহমদের ধানী জমিতে পড়ে আছে।
খবর পেয়ে আব্দুল মজিদসহ তার পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাইয়ের লাশ দেখতে পান। নিহত নুর
আলমের বাম গাল, বাম কান, গলা, কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
খবর পেয়ে দোয়ারাবাজার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়।
এ ঘটনায় নিহত নুর আলমের ভাই আব্দুল মজিদ বাদী হয়ে পরদিন ০৫/০৬/২০২১ ইং তারিখে অজ্ঞাতনামা
হত্যাকারীদের আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (দোয়ারাবাজার তানার মামলা নং- ০৪, তাং�০৫/০৬/২০২১ ইং)।
মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ ঐ রাতেই সন্দিগ্ধ আসামী কামরুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আসামী
কামরুলকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসে জিরাগাঁও গ্রামের মবশ^র আলীর
পুত্র ওসমান গণি (৩৫) ও ওমর গণি (২৬), মরহুম মুক্তিযোদ্ধা আব্দুছ ছাত্তারের পুত্র সুজন মিয়া ও সুজন মিয়ার
স্ত্রী রুবিনা বেগমকে।
পরবর্তীতে পুলিশ আসামী কামরুলকে আদালতে উপস্থাপন করলে আসামী কামরুল হত্যকান্ডে
সংশ্লিষ্ট থাকার কথা স্বীকার করে বিচারিক হাকিমের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান
করে।
বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুজন মিয়ার সুজিনা বেগমের সাথে ভিকটিম নুর
আলম অনৈতিক সম্পর্কের জেরে নুর আলম কুন হয়েছে বলে আদালতে স্বীকার করেছে কামরুল।
তার সাথে আটক আসামীরা হত্যকান্ডে অংশ নেয় বলেও তথ্য দিয়েছে বলে দাবী করেছে পুলিশ।
আটককৃতদের মধ্যে ওসমান গণি ও রুবিনা বেগম পরবর্তীতে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি
পেলেও এখনো জেল হাজতে আছে ওমর গণি ও সুজন মিয়া। জেলে আছে কামরুলও।
প্রধান সন্দেহভাজন কামরুলের দাদী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুছ ছাত্তারের স্ত্রী নুরজাহান বিবি
(৭৫) অভিযোগ করেন, ঘটনার পর পরই কামরুলকে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর ইন্ধনে তার ছেলে সুজন মিয়া, ছেলের বউ রুবিনা এবং নাতি
ওমর গণি এবং ওসমান গণিকে আটক করে পুলিশ। অথচ, তার পরিবারের কেউ-ই ঘটনার সাথে
জড়িত নয়। নুরজাহান বিবি দাবী করেন, কামরুল আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছে, তা
পুলিশের শেখানো। কামরুলকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন চালিয়ে ও ভয়ভীতি প্রদর্শণ জোর
করে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে।
তার পুত্র, পুত্রবধু, নাতিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা‘ দাবী
করে গত ১৪ আগস্ট সিলেট রেঞ্ছ পুলিশের ডি.আই.জি বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন নুরজাহান
বিবি। তিনি মামলাটি দোয়ারাবাজার থানা পুলিশের পরিবর্তে সিআইডি,ডিবি বা পিবিআই মারফত
তদন্তের ব্যবস্থা করার জন্য ডি.আই.জির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বাদী, নিহত নুর আলমের ভাই আব্দুল মজিদ গত ৯
আগস্ট সুনামগঞ্ছের পুলিশ সুপার বরাবরে দেয়া এক অভিযোগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা,
দোয়ারাবাজার থানার এস.আই সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা বা উৎকোচ দাবীর
অভিযোগ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, মামলাটি দায়ের করার পর থেকে এস.আই সাইদুল
ইসলাম একাধিক বার নানা অজুহাতে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। মামলার তদন্তের জন্য
আরো বড় অংকের টাকা দাবী করছেন এস.আই সাইদুল। এ অবস্থায় মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে
সন্দিহান হওয়ায় মামলাটি দোয়ারাবাজার থানার পরিবর্তে সরকারের অন্য কোন সংস্থায় তদন্তের
জন্য প্রেরণের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।