
নিউজ পয়েন্ট সিলেট
মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য নতুন একটি মন্দির স্থাপনের মধ্য দিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হলো। রাজ্যে ওয়ারেন সিটিতে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার দিয়ে মন্দিরটি কেনা হয়েছে। মন্দিরটির নাম করণ করা হয়েছে টেম্পল অব জয় ( আনন্দ আশ্রম)। কিন্তু মন্দিরটি শিব মন্দির হিসেবে পরিচিত হবে।
আর এই মন্দিরের অর্থায়ন করছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং স্বনামধন্য দার্শনিক ডা: দেবাশীষ মৃধা ও তার সহধর্মিনী চিনু মৃধা।সাম্প্রতিক সময়ে মিশিগানে বাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীর জনসংখ্যা। সে তুলনায় বাঙালীদের দ্বারা পরিচালিত মন্দিরের সংখ্যা এখানে খুবই নগন্য।
যে দুটি মন্দির রয়েছে সেখানেও স্থান সংকুলানের অভাব। এতে পুণ্যার্থীদের যেমন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে ভোগান্তি হচ্ছে, তেমনি আনন্দ উৎসব থেকে অনেককে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। আর তাই এখানকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কয়েক বছর ধরেই আর একটি বড় মন্দির স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত মিশিগান রাজ্যের বাঙালি অধ্যুষিত ওয়ারেন সিটির ৩১৬৯৬, রায়ান রোডে মন্দিরটি স্থাপন হওয়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা খুবই আনন্দিত। জানা যায় মিশিগানে কয়েক হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ বাস করেন। এর মধ্যে হ্যামট্রাম্যাক, ডেট্রয়েট, ওয়ারেন, স্টার্লিং হাইটস, ট্রয়, নভাই ও লিভোনিয়া সিটিতে মূলত অধিকাংশ হিন্দু পরিবারের বসবাস।
তাছাড়া প্রতি বছর জনসংখ্যা যথেষ্ট পরিমানেই বাড়ছে। রাজ্যের বাঙালি অধ্যুষিত ডেট্রয়েট সিটিতে ডেট্রয়েট দুর্গা টেম্পল এবং ওয়ারেন সিটিতে রয়েছে মিশিগান কালিবাড়ি। কিন্তু উৎসব পার্বনে এসব মন্দিরে স্থান সংকুলান দেখা দেয়। সার্বিক অবস্থার কথা চিন্তা করে মৃধা পরিবারের কাছে অনেক দিন ধরেই একটি বড় মন্দিরের স্থাপনের জানিয়ে আসছিলেন মিশিগানে বসবাসরত বাঙালি হিন্দুরা। আজ সোমবার তাদের সেই দাবি পূরণ করলেন মৃধা পরিবার। জানা গেছে, মন্দিরের জন্য ৩ দশমিক ৫ একর জায়গার উপর ১৩ হাজার ২ শত ৮০ বর্গফুট আয়তনের ওই স্থাপনাটিকে অধিগ্রহণ করতে হয়েছে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। সম্পূর্ণ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত মন্দিরটিতে রয়েছে চেয়ারম্যান রুম, কফি রুম, চিলড্রেন অবজারভেশন রুম, চিলড্রেন প্লে রুম, সুসজ্জিত কর্মাশিয়াল কিচেন, দৃষ্টিনন্দন পুজার ঘর এবং একটি বেনকুয়েট হল। পুজার ঘর ও বেনকুয়েট হলের ধারণ ক্ষমতা হলো ৪৯০ জনের। মন্দিরের সামনে সার্কুলার ড্রাইভে ৭ ফুট উচ্চতার মার্বেলের শিব মূর্তি তৈরী এবং মন্দিরের সদর দরজা আধুনিকরনের জন্য আরও প্রায় ৫ লাখ ডলার খরচ করা হবে জানানো হয়েছে।এ থেকে বুঝা যাচ্ছে মিশিগানে এটিই হবে বাঙালীদের জন্য একটি অতি সুন্দর দর্শনীয় উপাসনালয়।
এদিকে গতকাল সোমবার মন্দিরে প্রবেশ উপলক্ষে বিশেষ পুজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা করেন পূর্নেন্দু চক্রবর্তী অপু। পূজা শেষে ডা: দেবাশীষ মৃধা, তার সহধর্মিনী চিনু মৃধা এবং কন্যা অমিতাসহ উপস্থিত সুধীজনকে নিয়ে ফিতা কেটে কীর্তন সহকারে মন্দিরে প্রবেশ করেন। পরে সুধীজনের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ডা: দেবাশীষ মৃধা, তার সহধর্মিনী চিনু মৃধা, ইঞ্জিনিয়ার রতন হাওলাদার, রাখি রঞ্জন রায়, সৌরভ চৌধুরী, আশুতোষ চৌধুরী, অজিত দাশ, পূর্নেন্দু চক্রবর্তী অপু। উপস্থিত ছিলেন, কমলেন্দু পাল, স্বদেশ রঞ্জন সরকার, কালি শঙ্কর দেব, তপন শিকদার, হিরা লাল কপালী, টিটু দত্ত, অসিত রঞ্জন চৌধুরী, অশোক দাশ, প্রশান্ত দাশ, অপূর্ব কান্তি চৌধুরী, স্বপন পাল, দিপক রায়, বাবুল পাল, ইঞ্জিনিয়ার তন্ময় আচার্য্য, ধ্রুব দেব, গৌরব চৌধুরী, গৌরি আচার্য্য, রুপাঞ্জলি চৌধুরী, সুপর্না চৌধুরী, জয়া দত্ত, রিমা ধর, সঙ্গীতা পাল সহ আরও অনেক।
চিনু মৃধা বলেন, আমরা গর্বিত যে এই অপুর্ব সুন্দর মন্দিরটি খুব সুন্দর একটি জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। আমাদের অনেকদিন থেকেই আশা এবং পরিকল্পনা ছিলো এমন কিছু করার যাতে সবাই উপকৃত হয়।
দার্শনিক দেবাশীষ মৃধা বলেন, আমাদের জন্ম হয়েছে আনন্দের জন্য, আমরা বেড়ে উঠি আনন্দের মধ্য দিয়ে, আমরা বেঁচে থাকি আনন্দ পাওয়া আর দেওয়ার জন্য। আবার আমরা এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে চাই আনন্দের মধ্য দিয়ে। তাই তিনি মন্দিরের নাম করণের জন্য প্রস্তাব করেন টেম্পল অব জয় ( আনন্দ আশ্রম)। চিনু মৃধা তার সাথে যোগ করে বলেন যদিও কাগজে কলমে এটির নাম হবে টেম্পল অব জয়, কিন্তু মন্দিরটি পরিচিত হবে শিব মন্দির হিসেবে। তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বী সবাইকে এই মন্দিরে এসে আনন্দ এবং উপাসনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানান।