নিউজ পয়েন্ট সিলেট
বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০
জৈন্তাপুর প্রতিনিধিঃ সিলেটের জৈন্তাপুরে পাহাড় কাটা কিছুতেই যেন থামছেই না। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে একটি প্রভাবশালী চক্র বেপরোয়া ভাবে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় কেটে ধ্বংস করছে।
সম্প্রতি উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে প্রকাশ্যে এসব পাহাড় কাটার মহোৎসব চালিয়ে গেলেও উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশের রহস্যজনক নীরব ভূমিকায় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের অভিযোগ, পাহাড় কাটারোধে প্রশাসনকে অবগত করলেও কোনো অভিযান চালানো হয় না। ফলে দিন দিন টিলা ও পাহাড় কাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অভিযোগ ওঠেছে, সংশ্নিষ্ট প্রশাসনকে হাত করে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। বিশেষ করে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের হরিপুর শিকারখাঁ গ্রামের ৯নং গ্যাস কুপের পাশেই আব্দুস সালাম মরির বাড়িতে, চান্দঘাট গ্রামের ইতালি নামক বাড়িতে, চান্দঘাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনের রাস্তা, চিকনাগুল পানিছড়া গ্রামের শামীম আহমদের বাড়ি সহ অসংখ্য স্থানে পাহাড় ও টিলা কাটা হচ্ছে বিরতিহীন ভাবে। এসব টিলা ও পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করছে চিহ্নিত পাহাড়খেকো চক্র। টিলা ও পাহাড়ের মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে এলাকার ফসলি জমি। একদিকে জৈন্তাপুর যেমন হারাচ্ছে সৌন্দর্য তেমনি দিন দিন কমছে কৃষি জমি। প্রতিদিন রাতের আধারে ওই এলাকা থেকে প্রায় ২০টি ট্রাক পরিবহন করছে পাহাড় কাটা মাটি। এভাবে পাহাড়কাটার কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে পাহাড় ও বনাঞ্চলের আয়তন।
স্থানীয়রা জানান, জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পাহাড় কাটার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেননি। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে কেউই এই ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে চান না। তারা জানান, রাত ১১টার পর থেকেই কুপি জ্বালিয়ে ওই এলাকায় শুরু হয় টিলা কাটা। টিলা কাটার ব্যাপারে রাতে এলাকার লোকজন প্রশাসনকে অবগত করলেও সে সময় কোনো অভিযান চালানো হয় না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, পাহাড় কাটা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্গন। আমরা উন্নয়ন চাই কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ নষ্ট করে উন্নয়ন চাই না। প্রশাসনের উদাসিনতায় এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে আমরা আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হারাবো। প্রশাসন পাহাড়ের মালিকের উপর মামলা করে আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার করতে হবে। আমি প্রায় সময় সিলেটে পাহাড় টিলা কাটা নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন পাই। প্রশাসন এই সকল প্রতিবেদন দেখেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় সিলেটে অনেক আংশেই পাহাড় টিলা কমে গেছে। এভাবে যদি পাহাড় টিলা কাটতে থাকলে দেশে ভূ-কম্পন আরো বাড়তে পারে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারুক আহমদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি গত রাতে ঘটনাস্থল দেখে এসেছি এবং পাহাড় কাটা পেছেছে কিন্তু ঘটনাস্থলে কাওকে না পাওয়ায় কোন ব্যবস্থা নিতে পারি নি। চাইলে একাদিক বার কল দিলেও তারা কল রিসিভ করে নি।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক ইমরান আহমদ বলেন, পাহাড় কাটা আইনগত ভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ এবং পরিবেশ বিধ্বংসী একটি কাজ। তাই কেউ যদি অবৈধভাবে পাহাড় কাটে তাহলে আমাকে তথ্য দিন। আমি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।