
নিউজ পয়েন্ট সিলেট
রবিবার, ২৩ মে, ২০২১
নিউজ পয়েন্ট সিলেট ডেস্কঃ সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচনে হাবিবের প্রার্থীতা ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সিলেট আওয়ামী পরিবারে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মো. লুৎফুর রহমানের দলীয় প্রার্থী হিসেবে হাবিবকে ঘোষণার পর এই মিশ্র প্রতিক্রিয়া এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। সবাই বলছেন, জেলা সভাপতি মানে জেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। এই অবস্থায় দলীয় একাধিক প্রার্থী সিলেট-৩ আসনের মাঠে সরব থাকলেও জেলা সভাপতি এককভাবে কোন ব্যক্তিকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নেত্রীর কাছে আহ্বান জানাতে পারেন না, যা দলীয় গঠনতন্ত্রে নেই।
গতকাল শনিবার দুপুরে দক্ষিণ সুরমায় হাবিবুর রহমান হাবিবের উদ্যোগে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে হাবিব আওয়ামীলীগের দলীয় গঠনতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে বয়োবৃদ্ধ জেলা সভাপতি লুৎফুর রহমানকে তাৎক্ষনিক প্রভাবিত ও প্ররোচিত করে তার নাম ঘোষনা দেওয়ায়। এসময় সরল মনে প্রবীণ নেতা প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মো. লুৎফুর রহমান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবকে এ আসনে মনোনয়ন দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ করেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে জেলা আওয়ামীলীগের একজন কর্মী বলেন, সিলেট-৩ আসন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দিনেও এই আসনটি টানা ৩য় বার ধরে রেখেছিলেন মরহুম সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছ। স্বাভাবিকভাবে উন্নয়নের রাজনীতি হিসেবে এখানে প্রার্থী হিসেবে সবাই বেছে নেবে আওয়ামীলীগকে। এই জন্য শূণ্য আসন ঘোষনার পর মাঠ ধাপিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন দলীয় এ আসনের প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর পত্নী ফারজানা চৌধুরী ছাড়াও প্রায় ২ ডজন নেতা। এই অবস্থায় দলীয় সভাপতি হিসেবে সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান কারো বিরুদ্ধাচারণ কিংবা পক্ষাবলম্বন করতে পারেন না। দলীয়ভাবেও এই বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।
এব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির উদ্দিন বলেন, দলীয় সভাপতি আমাদের সবার মুরব্বী। আমার বিশ্বাস হতে কষ্ট হচ্ছে এই সহজ সরল বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে ভুল বুঝিয়েএ ধরনের বক্তব্য আদায় করে নেওয়া হয়েছে। আমার অনুরোধ আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক যেই নৌকার প্রতীক মনোনয়ন পাবেন আমরা তার সাথেই আছি।
জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ শমশের জামাল বলেন, সিলেটের জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান যে বক্তব্য রেখেছেন তা আবেগ থেকে দিয়েছেন বলে আমি মনে করছি। দলীয় ফোরামে এখন পর্যন্ত সিলেট-৩ আসন উপ নির্বাচন নিয়ে কোন বৈঠক হয়নি। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেই মনোনয়ন পাবে আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। আওয়ামী লীগ থেকে যারা মনোনয়ন চাচ্ছেন সকলেই যোগ্য প্রার্থী। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে তার সাথেই কাজ করবেন।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোহাম্মদ আবু জাহিদ বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির বক্তব্য একটা দলীয় বক্তব্য, এটা উনার আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তির পক্ষে ব্যক্তিগত বক্তব্য বলে আমি মনে করি।
সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল বলেন, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচনের জন্য এখন কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এডভোকেট লুৎফুর রহমান সভাপতি হিসেবে ভবিষ্যতে গঠনন্ত্র মোতাবেক দায়িত্বশীল বক্তব্য রাখবেন বলে আমি মনে করি।
সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এডভোকেট বদরুল ইসলাম বলেন, হাবিব সাহেবের মঞ্চে সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমানের বক্তব্যে আমি মর্মাহত এবং বাকরুদ্ধ। আমি মনে করি এখানে প্রায় ৩০ জন প্রার্থী মাঠে আছেন এবং সব প্রার্থীরাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে লালন করে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই সভাপতির বক্তিগত বক্তব্য এভাবে প্রচার করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করা যাবে না।
উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান ২ ডজন নেতা। এদের মধ্যে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির রয়েছেন ৬ জন নেতা। তাই সভাপতি হিসেবে সরাসরি কারও পক্ষে অবস্থান নেয়া নিয়ে সমালোচনায় পড়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মো. লুৎফুর রহমান।
সাবেক ছাত্রনেতা মিসবাহ উদ্দীন সিরাজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। এডভোকেট নিজাম উদ্দিন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাকুর রহমান মফুর বর্তমানে বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
এছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির উদ্দিন, জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ শমশের জামাল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোহাম্মদ আবু জাহিদ, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুল বাছিত টুটুল, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এডভোকেট বদরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক দুলাল, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, সাংবাদিক শাহ্ মুজিবুর রহমান জকন, সহকারী অ্যাটর্নী জেনারেল আাব্দুর রকিব মন্টু, স্যার এনামুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন।
সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও সিলেট জেলা দায়রা জজ আদালতের পিপি নিজাম উদ্দিন বলেন, এডভোকেট লুৎফুর রহমান শুধু জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নন, জেলার একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদও বটে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে উনার কথাবলা উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ উনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তি। কিন্তু এই ঘোষনার পর অনেকেই উনার প্রতি বিরাগভাজন হতে পারেন। যা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। সবার অবগতির জন্য আমি বলতে চাই এটা দলীয় কোন সিদ্ধান্ত নয়, সভাপতির ব্যক্তিগত বক্তব্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠণতন্ত্র মোতাবেক দলীয় মনোনয়ন কাকে দেওয়া হবে এটা ব্যাপারে কেন্দ্র ও জেলা কোন সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত নেয়নি। এটা সভাপতির ব্যক্তিগত মতামত। যারাই প্রার্থী সবার উচিত সভাপতিকে এ ধরনের পরিস্থিতিতে না ফেলা।
লেখাটি সিলনিউজবিডি থেকে নেওয়া।