
নিউজ পয়েন্ট সিলেট
সোমবার, ১৭ মে, ২০২১
নিউজ পয়েন্ট সিলেট ডেস্কঃ করোনাকালীন স্বাস্হ্য সচেতনতা নিয়ে, পল্লীচিকিৎসক নিকুঞ্জ মোহন শর্মা(CHCP) ফার্মাসিস্ট,ক্যামিস্ট & ড্রাগিস্ট এর লেখা নিউজ পয়েন্ট সিলেটের কলামে প্রকাশিত⤵️
করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে সারা বিশ্বে এক ধরনের অচলাবস্থা বিরাজ করছে। কোনো কোনো দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফ্রন্টলাইনার হিসেবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে রোগীদের করোনার চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছেন। পরিসংখ্যানমতে এই ফ্রন্টলাইনারদের মৃতের সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি। এর কারণ উদ্ঘাটন করতে গিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে লক্ষণবিহীন করোনা রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি এবং মাস্কের ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে মানুষ উদাসীন।
শতভাগ মানুষ যদি শুধু মাস্ক ব্যবহার করত, তাহলে ৯০ শতাংশ মানুষই সুস্থ থাকত। জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করার সময় যদি কমপক্ষে ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা যেত, তাহলে চিকিৎসকদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা কমে যেত।
এছাড়া বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য অনলাইনে ফ্রি রেজিস্ট্রেশন ও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা প্রয়োজন। একজন চিকিৎসকের একদিনে ১০ জনের বেশি রোগী দেখা উচিত নয়। এতে চিকিৎসকরা নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হবেন এবং সাধারণ রোগীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ কমানো যাবে। গাড়িচালক ও ঘরের কাজের লোকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। অফিস-আদালত ও গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করতে হবে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রে করোনা চিকিৎসকদের করণীয় বিষয়ে একটি অস্বাভাবিক আদেশ জারি করেছে।
এতে করোনা চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসকদের চিকিৎসা শেষে আইসোলেশনে না থেকে সরাসরি বাসায় যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফলে ওই চিকিৎসকদের পরিবারের সদস্যদের করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে করোনা সংক্রমণ ও মৃতের হার আরও বাড়বে। তাই অবিলম্বে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাতদিন ডিউটি শেষে ১৪ দিন আইসোলেশনে ও পরবর্তী সাতদিন বাসায় থাকার পূর্বতন নিয়ম বহাল করা উচিত।
বয়স্ক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কো-মরবিডদের (উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, কিডনি রোগ, শ্বাসকষ্ট রোগী) অনলাইনে অফিস করা উচিত। অফিস স্টাফের সংখ্যাও কমানো উচিত। উপসর্গ নিয়ে কেউ যেন অফিসে না আসে সে বিষয়টি অফিসপ্রধানদের নিশ্চিত করতে হবে। এই অচেনা রোগটি কখন কাকে অক্রমণ করবে কেউ জানে না। তাই ব্যক্তিগত সুরক্ষার মাধ্যমে অর্থনীতি সচল করার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে হবে। বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশে চার লাখ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। যদিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৬ কোটি লোককে খাদ্য প্রদান, ৫০ লাখ লোককে নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন। এখন সব ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য শুধু সরকার নয়, দলমত নির্বিশেষে বিত্তবান সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সৌদি আরবে মাস্ক ব্যবহার না করলে ১০০০ রিয়াল জরিমানার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার না করলে আমাদের দেশে ৫০০ টাকা জরিমানা করা যেতে পারে। তবে আইনের প্রয়োগের চেয়ে জনসচেতনতা জরুরি। জনসচেতনতার মাধ্যমে করোনার ভয়কে জয় করে অর্থনীতিকে সচল করা সম্ভব হবে।
করোনা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অচলাবস্থার বিষয়টি সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তাই ভবিষ্যতে মূল বাজেটের শতকরা ১২ শতাংশ অথবা জিডিপির ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাপনায় যে সমন্বয়হীনতা আছে, কৃত্যপেশাভিত্তিক স্বাস্থ্য প্রশাসনের মাধ্যমে তা দূর করা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য জনশক্তি নিয়োগ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা প্রয়োজন।
করোনাকে ভয় নয়, বরং সচেতনতা ও আন্তরিকভাবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা অবলম্বন করার মাধ্যমে আমরা ‘নতুন স্বাভাবিক জীবনে’ ফিরে যেতে সক্ষম হব।
পল্লীচিকিৎসক নিকুঞ্জ মোহন শর্মা(CHCP) ফার্মাসিস্ট,ক্যামিস্ট & ড্রাগিস্ট।